ঢাকা ০৪:৩৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পান-সিগারেটের ডালায় স্বপ্ন মা হারা দুই শিশুর

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৭:১৬:৩৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ নভেম্বর ২০২০
  • ১৮৩ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মামুন আর সোহাগ দুই ভাই। একজনের বয়স দশ ও অন্যজনের ছয়। এ বয়সে লেখাপড়া, খেলাধুলা কিংবা আদর-যত্নে বেড়ে ওঠার কথা থাকলেও তা জোটেনি দুই ভাইয়ের কপালে। দুই বেলা খাবার জোগাড়ে পান-সিগারেটের ডালা নিয়ে হাঁটছে মাইলের পর মাইল।

কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার কাইততলা এলাকার বাসিন্দা মো. মাসুম কয়েক বছর আগে পরিবার নিয়ে এসেছিলেন চট্টগ্রাম নগরীতে। বছরখানেক আগে দুই সন্তান মামুন ও সোহাগকে রেখে মারা যান মা তাসলিমা বেগম। বর্তমানে বিআরটিসি এলাকার একটি ভাড়া বাসায় দুই সন্তানকে নিয়ে থাকছেন মাসুম। তিনিও পান-সিগারেট বিক্রেতা।

রাত পেরিয়ে সকাল হলেই শুরু হয় বাবা ও সন্তানদের জীবিকার তাগিদে ছুটে চলা। বিআরটিসি থেকে শুরু হয়ে বাবার গন্তব্য একদিকে, সন্তানদের অন্যদিকে। পান-সিগারেটের ডালা গলায় ঝুলিয়ে নগরীর অলিগলি ঘুরে বেড়ানো মামুনের সঙ্গেই থাকে ছোট ভাই সোহাগ। কখনো ভাইয়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে একটু এদিক-ওদিক ঘুরে নেয়। আবার ভাইয়ের পাশে ছুটে আসে। মামুন গলা ছেড়ে বলে- পান, সিগারেট…। তাকে অনুসরণ করে সোহাগও বলে- পান, সিগারেট…।

মামুনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ছয় থেকে সাত হাজার টাকা পুঁজি রয়েছে তার ডালায়। বলতে গেলে বয়সের তুলনায় ডালাটি একটু ভারীই বটে। সেই ডালা নিয়ে দিনভর ঘুরে ১৫০-২০০ টাকা আয় হয় তার। রাতে বাসায় ফিরে সেই টাকা তুলে দেয় বাবার হাতে। আবার কখনো এর বেশকম হলেও আপত্তি করেন না বাবা।

দিনভর পথে ঘুরে বেড়ানো দুই ভাইয়ের খাবার জোটে পথেই। আমানত শাহ (রহ.), গরিবুল্লাহ শাহ (রহ.), মিসকিন শাহ ও বদনা শাহ এসব মাজার ঘুরে হয়ে যায় খাদ্য সংস্থান।

মাজারের সামনে বসে থাকা ভিক্ষুকদের খাবার দিতে স্থানীয় হোটেলগুলোর প্রবর্তিত বিশেষ কার্ড কিনে দেন বিভিন্ন ব্যক্তি। ৬০ থেকে ৭০ টাকায় কেনা সেই কার্ডে পাওয়া যায় একবেলার খাবার। এতে ভাতের সঙ্গে থাকে মাছ, মুরগি কিংবা সবজি। একাধিক কার্ড পাওয়া ভিক্ষুকরা নিজের জন্য একটি রেখে বাকিগুলো ২০ টাকা দরে বিক্রি করে দেন। সেখান থেকে একটি কার্ড কিনে নেয় মামুন। এরপর নির্দিষ্ট হোটেলে গেলে দেয়া হয় খাবার। সেই খাবারটিই ছোট ভাইকে নিয়ে ভাগ করে খায় সে।

একইভাবে খাদ্য সংস্থান হয় বাবা মাসুমেরও। কখনো আবার হোটেলে দেখা হয়ে যায় বাবা-সন্তানদের। তখন তারা আনন্দ ভাগাভাগি করে খায়। খাওয়া শেষে শুরু হয় আবার পথচলা। এভাবেই ঘুরতে থাকে তাদের বিবর্ণ জীবনের দিনপঞ্জি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

পান-সিগারেটের ডালায় স্বপ্ন মা হারা দুই শিশুর

আপডেট টাইম : ০৭:১৬:৩৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ নভেম্বর ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মামুন আর সোহাগ দুই ভাই। একজনের বয়স দশ ও অন্যজনের ছয়। এ বয়সে লেখাপড়া, খেলাধুলা কিংবা আদর-যত্নে বেড়ে ওঠার কথা থাকলেও তা জোটেনি দুই ভাইয়ের কপালে। দুই বেলা খাবার জোগাড়ে পান-সিগারেটের ডালা নিয়ে হাঁটছে মাইলের পর মাইল।

কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার কাইততলা এলাকার বাসিন্দা মো. মাসুম কয়েক বছর আগে পরিবার নিয়ে এসেছিলেন চট্টগ্রাম নগরীতে। বছরখানেক আগে দুই সন্তান মামুন ও সোহাগকে রেখে মারা যান মা তাসলিমা বেগম। বর্তমানে বিআরটিসি এলাকার একটি ভাড়া বাসায় দুই সন্তানকে নিয়ে থাকছেন মাসুম। তিনিও পান-সিগারেট বিক্রেতা।

রাত পেরিয়ে সকাল হলেই শুরু হয় বাবা ও সন্তানদের জীবিকার তাগিদে ছুটে চলা। বিআরটিসি থেকে শুরু হয়ে বাবার গন্তব্য একদিকে, সন্তানদের অন্যদিকে। পান-সিগারেটের ডালা গলায় ঝুলিয়ে নগরীর অলিগলি ঘুরে বেড়ানো মামুনের সঙ্গেই থাকে ছোট ভাই সোহাগ। কখনো ভাইয়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে একটু এদিক-ওদিক ঘুরে নেয়। আবার ভাইয়ের পাশে ছুটে আসে। মামুন গলা ছেড়ে বলে- পান, সিগারেট…। তাকে অনুসরণ করে সোহাগও বলে- পান, সিগারেট…।

মামুনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ছয় থেকে সাত হাজার টাকা পুঁজি রয়েছে তার ডালায়। বলতে গেলে বয়সের তুলনায় ডালাটি একটু ভারীই বটে। সেই ডালা নিয়ে দিনভর ঘুরে ১৫০-২০০ টাকা আয় হয় তার। রাতে বাসায় ফিরে সেই টাকা তুলে দেয় বাবার হাতে। আবার কখনো এর বেশকম হলেও আপত্তি করেন না বাবা।

দিনভর পথে ঘুরে বেড়ানো দুই ভাইয়ের খাবার জোটে পথেই। আমানত শাহ (রহ.), গরিবুল্লাহ শাহ (রহ.), মিসকিন শাহ ও বদনা শাহ এসব মাজার ঘুরে হয়ে যায় খাদ্য সংস্থান।

মাজারের সামনে বসে থাকা ভিক্ষুকদের খাবার দিতে স্থানীয় হোটেলগুলোর প্রবর্তিত বিশেষ কার্ড কিনে দেন বিভিন্ন ব্যক্তি। ৬০ থেকে ৭০ টাকায় কেনা সেই কার্ডে পাওয়া যায় একবেলার খাবার। এতে ভাতের সঙ্গে থাকে মাছ, মুরগি কিংবা সবজি। একাধিক কার্ড পাওয়া ভিক্ষুকরা নিজের জন্য একটি রেখে বাকিগুলো ২০ টাকা দরে বিক্রি করে দেন। সেখান থেকে একটি কার্ড কিনে নেয় মামুন। এরপর নির্দিষ্ট হোটেলে গেলে দেয়া হয় খাবার। সেই খাবারটিই ছোট ভাইকে নিয়ে ভাগ করে খায় সে।

একইভাবে খাদ্য সংস্থান হয় বাবা মাসুমেরও। কখনো আবার হোটেলে দেখা হয়ে যায় বাবা-সন্তানদের। তখন তারা আনন্দ ভাগাভাগি করে খায়। খাওয়া শেষে শুরু হয় আবার পথচলা। এভাবেই ঘুরতে থাকে তাদের বিবর্ণ জীবনের দিনপঞ্জি।